Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ইতিহাস

দুমকী উপজেলার ইতিহাস

দুমকী একটি নবগঠিত উপজেলা। যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ০৮ জুলাই-২০০০। দুমকী গ্রামের তথা দক্ষিন বঙ্গের কৃতি সন্তান সাবেক মন্ত্রী ও মন্ত্রীপরিষদ সচিব মরহুম এম. কেরামত আলী সাহেবের প্রচেষ্টায় ১৯৮৩ সালের ২৮ জুলাই দুমকী পুলিশ থানা প্রতিষ্ঠা হয়। পরবর্তীতে সবস্তরের দুমকীবাসীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নানা পথ পরিক্রমার মাধ্যমে বতর্মান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় ২০০০ সালের ২ ফেব্রুয়ারী প্রথম উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দুমকীতে কাজে যোগদানের মাধ্যমে দুমকী উপজেলার কাযর্ক্রম শুরু হয়।  ২০০০ সালের ৮ জুলাই তৎকালীন ও বতর্মান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক শুভ উদ্বোধন করা হয় আজকের সুরম্য প্রশাসনিক ভবনের ও সৌন্দযর্মন্ডিত উপজেলা কমপ্লেক্সের। একই দিনে তিনি দুমকী উপজেলায় প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিন বাংলার সবর্প্রথম ও সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ দুমকী উপজেলায় রয়েছে দক্ষিন বঙ্গের আরও একটিগুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠান আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র।

 

বিস্তারিত ইতিহাসঃ

বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, বর্তমান পটুয়াখালী যার মুল নাম ছিল পর্তুগীজদের খাল বা পৌটাখালী। কোন কোন লেখায় উল্লেখ রয়েছে পটুয়ার খাল বা পতুয়ার খাল থেকে পটুয়াখালী নামের উৎপত্তি। ব্রিটিশ প্রশাসনের তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার অর্ন্তগত ছিল আজকের পটুয়াখালী। এ পটুয়াখালী থানার একটি ইউনিয়ন ছিল লেবুখালী। লেবুখালী ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়টি স্থাপিত হয় দুমকী গ্রামের অধীন পিরতলা বাজারে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের অব্যহতি পরে এ এলাকার কিছু মহতি মানুষের উদ্যোগে ১৯৭২ খ্রি. দুমকী গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় জনতা কলেজ। এরপর এই কলেজ ক্যাম্পাসে ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ পটুয়াখালী কৃষি কলেজ। এই বাজার, কলেজ, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমৃদ্ধ ব্যবসা তৎকালীন দুমকীকে একটি থানার মর্যাদায় উন্নীত করণের ভিত্তি হিসাবে কাজ করে। প্রতিষ্ঠিত হয় দুমকী পুলিশ থানা। এরই ধারাবাহিকতায়  স্থানীয় নেতৃবৃন্দ; শিক্ষক, ইমাম, পেশাজীবি ও সবর্স্তরের দুমকী বাসীকে নিয়ে দুমকী থানাকে একটি প্রশাসনিক থানায় উন্নীত করা ও পটুয়াখালী কৃষি কলেজকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা সহ ৫দফা দাবী প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার, প্রশাসন ও রাজনৈতিক বিভিন্ন পর্যায়ে প্রচেষ্টা চালান। এই প্রক্রিযার সাথে যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন ও সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম- বতর্মান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার, বতর্মান মাননীয় ধমর্প্রতিমন্ত্রী জনাব এডভোকেট আলহাজ্ব শাহজাহান মিয়া, এমপি, সাবেক বস্ত্রপ্রতিমন্ত্রী আ.খ.ম. জাহাঙ্গীর হোসাইন, বতর্মান মাননীয় হুইপ আ.স.ম ফিরোজ এমপি, মোঃ মজিবুর রহমান তালুকদার, এমপি. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম এমপি. মিসেস নার্গিস আরা হক, এমপি, মরহুম সৈয়দ শামসুল আলম, মরহুম মজিবুর রহমান মৃধা, মরহুম নাসির মৃধা, মরহুম আলী আকবর মৃধা, আংগারিয়া ইউনিয়ের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন আবু মিয়া, আবদুল হক ইঞ্জিনিয়ার, লেবুখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, সৈয়দ শাহআলম, মাহতাব উদ্দিন মিয়া, মাষ্টার আবদুল মজিদ, সুলতান খান, মাওলানা রুহুল আমিন, বতর্মান প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব আবদুল মালেক, তৎকালীন উপদেষ্টা ড. এস.এ মালেক, প্রতিমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, তৎকালীন ভূমি প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব রাশেদ মোশাররফ, কৃষিবিদ বাহাউদ্দিন নাসিম, আবদুল মান্নান হাওলাদার (সচিব), সাবেক যুগ্নসচিব মরহুম আবদুল খালেক, আলতাফ হোসেন তালুকদার, মরহুম এছাহাক আলী মৃধা, আলী হোসেন মুন্সী, প্রফেসর আ.ক.ম মোস্তফা জামানসহ আরও অনেকে। (তথ্য সূত্র : মাওলানা আলমগীর হোসাইন, সাবেক প্রশাসক, শ্রীরামপুর ইউনিয়ন পরিষদ, দুমকী উপজেলা পরিষদ বার্তা-২০১২)।

 

উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এক সময় বাকেরগঞ্জের দক্ষিন অঞ্চল ছিল নদীনালা খাল আর বন জংগল দিয়ে ঘেরা। বর্তমান পটুয়াখালী ছিল সুন্দরবনের একটি অংশ। সেখানে কোন মানুষের বসবাস ছিলনা। পটুয়াখালী শহরের উত্তর পাশে পায়রা নদী রয়েছে। পায়রা নদীর উত্তর পারে বিস্তৃত এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে লোক বসতি ছিল। এই লোকবসতি অঞ্চলেই তৎকালের পর্তুগীজ জলদস্যুরা লুটতরাজ করত। সপ্তদশ শতাব্দীতে মগ ও পর্তুগীজ জলদস্যুদের উপদ্রব ও অত্যাচার এতগুনে বেড়ে গিয়েছিল যে এলাকার নদীনালা খাল দিয়ে লাউকাঠী, বদরপুর, পাংগাশিয়া, লেবুখালী, মৌকরণ, শ্রীরামপুর, দুমকী, জলিশা, আংগারিয়া এ সমস্ত এলাকায় তারা এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তখন এ অঞ্চল চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য নামেই ইতিহাসে প্রসিদ্ধ ছিল। মূলত তৎকালে হিন্দু রাজারাই এ অঞ্চল শাসন করত। বর্তমানে লোহালিয়া নদীর পশ্চিম পাড়ের মুরাদিয়া, শ্রীরামপুর, জামুরা, পারকার্ত্তিকপাশা তথা বর্তমান দুমকী উপজেলা এলাকা ছিল চিত্রকর, সুতা বিক্রয়কারী এবং হাড়িপাতিল তৈরী ও বাজারজাতকরণের জন্য প্রসিদ্ধ। আজকের এ দুমকী থানার মধ্যদিয়ে ছিল অজস্র ছোট বড় নদীনালা খাল তার মধ্যে মুরাদিয়া নদী, শ্রীরামপুর নদী, ডাকাতিয়া খাল, কোকারজোড় খাল, গাবতলী, পিছাখালী, পীরতলা খাল, গোদার খাল অন্যতম। যা পরবর্তীতে পলিমাটি পড়ে চর জেগে উঠেছে এবং আস্তে আস্তে জনবসতি গড়ে উঠে। তাই আজও অনেক জায়গার মাটি কেটে গভীরে গেলে পলি মাটির স্তর, ভাংগা হাড়িপাতিল এমনকি বাঁশঝাড়, গোলপাতা ও অনেক মঠ মন্দির ও কাঠের নিদর্শন পাওয়া যায়। এছাড়াও সে যুগের অনেক শান বাধাঁনো ঘাটের দীঘি বা পূরাকীর্তি ইতিমধ্যেই অনেক স্থানে আবিস্কৃত হয়েছে।

 

এক সময় বরিশাল জেলাকে বাংলার শস্য ভান্ডার বলা হতো। মূলত তার কেন্দ্র বিন্দু ছিল এ দুমকী উপজেলার লেবুখালী বন্দর, মৌকরণ বাজার, কদমতলা বাজার। এ সমস্ত বাজারগুলো বালাম চাউলের জন্য বিখ্যাত ছিল। এখানে বিভিন্ন জাতের ও বিভিন্ন নামের প্রচুর ধান আবাদ হতো। তার মধ্যে আমন মোটা চাল নামকরা। তাছাড়া চিকন ধান, চিঙ্গুরভুষী, বাঁশবহরী, সীতাভোগ, শাক্করখানা আরও কত নামে কত ধান। অত্র এলাকার বিখ্যাত বালাম চাল ছিল গর্ব ও অহংকার। শোনা যায়, কলকাতা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে থেকে বড় বড় চাল ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার মণের বিরাট মাস্ত্তল তোলা নৌকা ও ঘানী নৌকার মেলা জমাতো। (তথ্য সূত্র : অধ্যক্ষ, জামাল হোসেন, দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিনিধি, দুমকী ও জোবায়দুল হাসান, দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি, দুমকী)

 

এক সময় আজকের দুমকী ছিল একটি অপরিচিত নাম। দুমকী থানার গোড়াপত্তন হয় মূলত পীরতলা বাজারকে কেন্দ্র করে । দুমকী থানা ভবন, জনতা কলেজ, সাবেক পটুয়াখালী কৃষি কলেজ (বর্তমান পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,) রেজিস্ট্রি অফিস, নসীব সিনেমাহল, লেবুখালী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, পীরতলা বাজার জামে মসজিদ, রূপালী ও কৃষি ব্যাংক গড়ে উঠায় উপজেলা প্রতিষ্ঠার দাবী জোড়ালো ভিত্তি পায়।

 

পীরতলা নামের উৎপত্তিঃ

জনশ্রুতি আছে, শ্রীরামপুর গ্রামের বর্তমান পীরতলা বাজার এর পূর্ব পাশে খালের পূর্ব পাড়ে একটি বিরাট পীর গাছ ছিল যে গাছটি অনেক উচু ছিল। তার উপর দাড়িয়ে অনেক দুর দেখা যেত। এক সময় গাছটি আস্তে আস্তে  মাটির নিচে দেবে যায়। তার সূত্র ধরেই পীরতলা নামকরণ করা হয়। এলাকায় কথিত আছে এ গাছের গোড়া থেকে উত্তরাঞ্চল থেকে আসা পাতিল ব্যবসায়ীরা অনেক মূল্যবান ধনসম্পদ উত্তোলণ করে গোপনে চলে গিয়েছিল।

 

দুমকী উপজেলার নামকরণঃ

দুমকী নামটি সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তাহলো দুমকী নামটির উৎপত্তি মূলত দ্বি-মূখী একটি খালের নাম থেকে । পটুয়াখালী জেলার লেবুখালী ইউনিয়নের দুমকী একটি গ্রাম। এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করে দক্ষিণাঞ্চলের কৃতি সন্তান জনাব মরহুম এম. কেরামত আলী সাহেব। লেবুখালী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন মূলত শ্রীরামপুর গ্রামের পীরতলা বাজারে অবস্থিত। এলাকার তৎকালীন মুরববীগন এম. কেরামত আলী সাহেবের সম্মানে দুমকী গ্রামের নামেই দুমকী থানার নামকরণ করেন। দুমকী থানা ভবন পটুয়াখালী কৃষি কলেজ সব কিছুই শ্রীরামপুর মৌজায় থাকা সত্বেও কেহই ইহার বিরোধীতা করেন নাই। (তথ্য সূত্র: মাওলানা আলমগীর হোসেন, প্রাগুক্ত)